Friday, October 17, 2025

সর্বাধিক পঠিত

আরও পড়ুন

নির্বাচন নিয়ে আনিসুল ইসলামের বিস্ফোরক দাবি!

ঢাকা, ১১ অক্টোবর ২০২৫: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও, দেশের সাধারণ নাগরিকরা এতে বিশ্বাস করছেন না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (একাংশ) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এই নির্বাচনকে ইতিহাসের সবচেয়ে নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য বলে দাবি করলেও, বাস্তবে জনগণের মধ্যে গভীর সংশয় রয়েছে।

শনিবার রাজধানীর গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই মত প্রকাশ করেন আনিসুল ইসলাম। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অংশ নিয়ে রাজনীতিবিদ এবং সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছ থেকে শোনা সংশয়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, “উপস্থিতরা প্রশ্ন তোলেন, ফেব্রুয়ারিতে সত্যিই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কি না? এই প্রশ্নের মধ্যেই উত্তর লুকিয়ে আছে, কারণ এতে তাদের নিজস্ব সন্দেহ প্রতিফলিত হয়। শুধু তারা নয়, দেশের সাধারণ মানুষও একই প্রশ্ন করছেন এবং বিশ্বাস করছেন না যে ফেব্রুয়ারিতে ভোট হবে।”

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বারবার জানিয়েছেন যে, ফেব্রুয়ারিতেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং এটি হবে ‘ইতিহাসের সেরা নির্বাচন’। কিন্তু আনিসুল ইসলাম এই দাবির প্রতি সংশয় প্রকাশ করে বলেন, “একদিকে প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টারা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বলছেন, অন্যদিকে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম দাবি করছেন যে প্রশাসনের সব পদ বিএনপি-জামায়াত ভাগ করে নিয়েছে। এমন প্রশাসনিক ব্যবস্থায় কীভাবে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব? এমনকি একটি শিশুও এতে বিশ্বাস করবে না।”

তিনি আরও যোগ করেন, দেশে বর্তমানে ‘জনতার সন্ত্রাস’ চলছে, যার কারণে অনেকে সত্য কথা বলতে ভয় পান। “প্রতিদিন কোথাও না কোথাও হত্যাকাণ্ড ঘটছে, পুলিশ অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করছে, মানুষকে জবাই করে মারা হচ্ছে এবং প্রকাশ্যে গুলি চালানো হচ্ছে। এমন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি হাস্যকর মনে হয়।”

জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনে আলোচনায় আমন্ত্রণ না পাওয়া প্রসঙ্গে আনিসুল ইসলাম বলেন, সংবিধান পরিবর্তনের জন্য শক্তি প্রয়োগ করা উচিত নয়। “গায়ের জোরে সংবিধান বদলানোর চিন্তা করবেন না। আগামী ১০ বছর পর হয়তো বলা হবে যে, যারা এটি পরিবর্তন করেছে তারা অপরাধী এবং তাদের বিচার করতে হবে। সংবিধান সংশোধনের জন্য নির্বাচিত সংসদ প্রয়োজন। ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পরও সংবিধান পরিবর্তন করা যেত, কিন্তু তা করা হয়নি। বর্তমানে সাংবিধানিকভাবে শপথ নিয়ে রাষ্ট্র চালানো হচ্ছে, তাই এখন সংবিধান পরিবর্তনের কথা ভাবা ঠিক নয়।”

সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। তিনি বলেন, “গত বছরের ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লবে দেশবাসী পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিল এবং অনেকে জীবন দিয়েছে। কিন্তু ১৪ মাস পরও সেই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন এসেছে কি না, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন ঘুরছে।”

জাতীয় যুব সংহতির আহ্বায়ক ফখরুল আহসান শাহজাদার সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক এম এম আল জুবায়েরের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন, সাহিদুর রহমান, লিয়াকত হোসেন, জহিরুল ইসলাম, মোস্তফা আল মাহমুদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান, নাজমা আকতার, আরিফুর রহমান খান, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, নূরুল ইসলাম মিলন ও বেলাল হোসেন।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদের এই মন্তব্য বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনা উস্কে দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও জনসন্দেহ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নির্বাচনের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই আলোচনা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

সাম্প্রতিক