Friday, October 17, 2025

সর্বাধিক পঠিত

আরও পড়ুন

ঝালকাঠিতে পেনশনের জন্য ঘুষ দিতে হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা!

ঝালকাঠি, ১৩ অক্টোবর: দুর্নীতি প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আয়োজিত এক গণশুনানিতে স্থানীয় সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সোমবার ঝালকাঠি জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে সেবাগ্রহীতারা হয়রানি, অনিয়ম এবং ঘুষ গ্রহণের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরেন। ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুবশক্তির ঐক্য, নির্মাণ করব স্বচ্ছ ভবিষ্যৎ’ এই স্লোগানের আলোকে চলা শুনানিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শতাধিক অভিযোগ জমা পড়ে।

অনুষ্ঠানে একটি উল্লেখযোগ্য অভিযোগ করেন সাগর হোসেন নামে এক ব্যক্তি। তিনি জানান, তাঁর মা একজন সরকারি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ছিলেন। মায়ের পেনশনের অর্থ ছাড় করতে ঝালকাঠি জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন প্রায় আড়াই লাখ টাকা ঘুষ চান। শেষমেশ এক লাখ ৯০ হাজার টাকা প্রদানের পরই পেনশনের টাকা হাতে পান তাঁরা। এই অভিযোগ দুর্নীতির গভীরতা প্রকাশ করে, যা সাধারণ নাগরিকদের জীবনে কীভাবে প্রভাব ফেলে তা তুলে ধরে।

তবে এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেন, “কোনো ধরনের ঘুষ নেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। আমি সততার সঙ্গে তাঁদের সহযোগিতা করেছি এবং পেনশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সাহায্য করেছি।”

গণশুনানিতে মোট ২৯টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, যার মধ্যে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, সেটেলমেন্ট অফিস, ওজোপাডিকো, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, প্রাণিসম্পদ বিভাগ এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নাম উল্লেখযোগ্য। দুদকের তালিকাভুক্ত ৭৪টি অভিযোগের শুনানি হয়, যার মধ্যে কয়েকটির তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়া হয় এবং অন্যান্যের জন্য তদন্তের নির্দেশ জারি করা হয়।

ঝালকাঠি সদরের সারেঙ্গল ফাজিল মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক মীর এনামুল হক অভিযোগ করেন যে, তাঁদের প্রতিষ্ঠানের নয়জন শিক্ষকের এমপিও ভুক্তির বিল প্রক্রিয়াকরণে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম হারুন অর রশিদ প্রত্যেকের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে ঘুষ দাবি করেন। পরে দুই হাজার টাকায় বিষয়টি মিটমাট হয়। তিনি আরও জানান, এই কর্মকর্তা বরিশালে কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি তৈরি করেছেন। শুনানিতে হারুন অর রশিদ উপস্থিত না থাকায় বিষয়টি তদন্তের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি দুদক কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, “যদি আমরা আয়ের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদ বা উপহার নিয়ে বাড়ি ফিরি, তাহলে সন্তানদের সামনে কী উত্তর দেব? আমাদের নিজেদের সততা বজায় রাখতে হবে এবং পরিবারকেও সঠিক পথে চালাতে হবে। দুর্নীতি রোধে প্রত্যেককে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে এবং সেবার মান উন্নয়নে নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন, বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক মোজাহার আলী সরদার এবং ঝালকাঠির পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায়।

দুদকের মতে, এই ধরনের গণশুনানি আয়োজনের মূল লক্ষ্য হলো সমাজে দুর্নীতি প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এর মাধ্যমে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং সেবার মান উন্নয়ন নিশ্চিত করা হয়। সেই সঙ্গে সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি রোধ করে দেশে সুস্থ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এমন অনুষ্ঠানগুলো দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

এই ঘটনা দুর্নীতি দমনের প্রয়োজনীয়তা আরও একবার স্পষ্ট করে তুলেছে, যা সকল স্তরের নাগরিকদের সচেতন করে তুলবে।

সাম্প্রতিক