Friday, October 17, 2025

সর্বাধিক পঠিত

আরও পড়ুন

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে লেথাল অস্ত্র ব্যবহার: শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশ প্রমাণিত

ঢাকা, ১৫ অক্টোবর ২০২৫: জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থান চলাকালীন আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই দিয়েছিলেন—এমন অভিযোগ এখন অকাট্য প্রমাণের মাধ্যমে সামনে এসেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ চলমান মামলায় চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বিভিন্ন অডিও রেকর্ডিং উপস্থাপন করে জানিয়েছেন, আন্দোলন দমনের জন্য ‘মারণাস্ত্র’ ব্যবহারের কৌশল ছিল শেখ হাসিনার মূল নীতি। এই মামলায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্কের তৃতীয় দিনে এসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

অডিও রেকর্ডিংয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা

ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত তিনটি পৃথক মোবাইল ফোন কথোপকথনের অডিও ক্লিপ থেকে দেখা যায়, শেখ হাসিনা শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল এবং জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলন দমনে বলপ্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন। চিফ প্রসিকিউটর জানান, তাপসের সঙ্গে কথোপকথনে শেখ হাসিনা সরাসরি লেথাল অস্ত্র ব্যবহারের আদেশ দেন। এই একটি প্রমাণই তাঁর দায়িত্বশীলতা প্রমাণ করতে যথেষ্ট, যেখানে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের ভূমিকা স্পষ্ট।

মাকসুদ কামালের সঙ্গে আলাপে শেখ হাসিনা র‍্যাব এবং বিজিবিকে নির্দেশ দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন। প্রসিকিউটরের মতে, এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে র‍্যাব এবং বিজিবির অভিযানে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ঘটে, যা সরাসরি শেখ হাসিনার আদেশের ফল। এছাড়া, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানের ওয়্যারলেস বার্তার অডিওও শোনানো হয়, যা আন্দোলন দমনের কৌশলকে আরও স্পষ্ট করে।

নির্দেশের চেইন অব কমান্ড

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিস্তারিত বর্ণনা করেন, কীভাবে লেথাল অস্ত্র ব্যবহারের আদেশ শেখ হাসিনা থেকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, তারপর সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এবং অবশেষে হাবিবুর রহমানের কাছে পৌঁছায়। এই চেইন অব কমান্ডের ফলে রাস্তায় গুলি চালিয়ে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ঘটে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, আন্দোলনকারীদের দমনের জন্য রাস্তার কোণে বালুর বস্তা দিয়ে বাঙ্কার তৈরি করে লাইট মেশিনগান (এলএমজি) স্থাপন করা হয়েছিল, যা মারণাস্ত্র ব্যবহারের সরাসরি বাস্তবায়ন।

ভিডিও এবং অন্যান্য সাক্ষ্য

ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত ভিডিও ফুটেজ থেকে গণ-অভ্যুত্থানের সময়কার ভয়াবহ ঘটনা স্পষ্ট হয়। এর মধ্যে রয়েছে রংপুরে শিক্ষার্থী আবু সাঈদ এবং রাজধানীর যাত্রাবাড়িতে ইমাম হাসানকে গুলি করার দৃশ্য। এছাড়া, আন্দোলনকারীদের শরীর থেকে উদ্ধারকৃত বুলেট এবং পেলেটের প্রমাণও দেখানো হয়েছে, যা অস্ত্র ব্যবহারের ধরন নির্দেশ করে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের প্রতিবেদন থেকে নারী এবং শিশুদের ওপর নির্যাতনের বিবরণ পড়ে শোনানো হয়। এছাড়া, প্রথম আলোসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতনের বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

মামলার অন্যান্য আসামি এবং ট্রাইব্যুনালের গঠন

এই মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও আসামি। তবে মামুন দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছেন। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে, যার অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

সম্পর্কিত অন্যান্য মামলা

জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে অনুরূপ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানি ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ দিয়েছে, যাতে আইনজীবীদের নথি পর্যালোচনার সময় দেওয়া হয়।

এছাড়া, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলায় তাদের হাজির হওয়ার জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অপর আসামিরা হলেন সদর উদ্দিন খান, আসগর আলী এবং আতাউর রহমান। প্রসিকিউশন জানিয়েছে, এদের কাউকে এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি।

এই মামলাগুলো গণ-অভ্যুত্থানের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিস্তারিত তদন্তের অংশ, যা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আরও আপডেটের জন্য আমাদের সাইটে থাকুন।

সাম্প্রতিক