Thursday, October 16, 2025

সর্বাধিক পঠিত

আরও পড়ুন

বিএনপি এর স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ

ঢাকা: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সম্প্রতি তাদের স্থায়ী কমিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার কর্মকাণ্ড নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দলীয় নেতারা মনে করছেন যে, এই উপদেষ্টাদের কিছু বক্তব্য এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে পক্ষপাতিত্বের ছাপ স্পষ্ট, যা সরকারের সামগ্রিক নিরপেক্ষ ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এই উদ্বেগগুলো দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত।

সোমবার রাতে গুলশানে অবস্থিত বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়াল মাধ্যমে সভাপতিত্ব করেন। সূত্রমতে, সভায় মূল ফোকাস ছিল সরকারের উপদেষ্টাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে আলোচনা। এছাড়া, জাতীয় সনদ স্বাক্ষর, প্রশাসনিক পরিবর্তন, নির্বাচনী কার্যক্রম এবং দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়েও বিস্তারিত মতবিনিময় হয়।

বিএনপির নেতারা কী বলছেন উপদেষ্টাদের নিয়ে?

সভায় উপস্থিত একাধিক সদস্য জানিয়েছেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার সাম্প্রতিক মন্তব্য এবং কার্যকলাপে স্পষ্ট পক্ষপাতিত্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ৫ আগস্টের পর প্রশাসনিক স্তরে যে সকল পরিবর্তন এবং নতুন নিয়োগ হয়েছে, তাতে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া, মাঠপর্যায়ে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের তালিকা প্রণয়নে ওই গোষ্ঠীর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। নির্বাচন যতই কাছে আসছে, সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে প্রশ্নও ততই বাড়ছে।

দলীয় নেতারা জোর দিয়ে বলেছেন যে, সরকারকে এখনই এমন পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে জনগণ এবং সব রাজনৈতিক দল নিশ্চিত হয় যে এটি সত্যিকারের তত্ত্বাবধায়ক-ধাঁচের নিরপেক্ষ প্রশাসন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, “আমরা চাই না যে এই সরকার তাদের নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলে। কিন্তু কয়েকজন উপদেষ্টার আচরণে জনগণের মধ্যে সন্দেহ জাগছে। একটি স্বচ্ছ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা স্পষ্টভাবে প্রদর্শিত হওয়া দরকার।”

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের পরিকল্পনা

সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, শিগগিরই বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। এই সাক্ষাতে দলের উদ্বেগগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। এতে সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার উপায় নিয়েও মতবিনিময় হতে পারে।

জাতীয় সনদ স্বাক্ষর এবং দলীয় কার্যক্রম

সভায় আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, ১৭ অক্টোবর জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিএনপির পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করবে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এই সনদে স্বাক্ষর করবেন।

এছাড়া, দলের গণসংযোগ এবং প্রচার কার্যক্রমকে আরও জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ে দলের বার্তা পৌঁছানোর জন্য মিডিয়া সেল এবং কমিউনিকেশন সেলকে আরও সক্রিয় করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপির বিরুদ্ধে চলমান অপপ্রচারের মোকাবিলায় পাল্টা কৌশল এবং বিকল্প বয়ান তৈরির পরামর্শও উঠে এসেছে।

প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া

প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা না হলেও, সূত্র জানায় যে এই দায়িত্ব ইতিমধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। তিনি মাঠপর্যায়ের মতামত বিশ্লেষণ করে শীঘ্রই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

এই সভা বিএনপির রাজনৈতিক কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার দাবিকে আরও জোরালো করে তুলেছে।

সাম্প্রতিক