Thursday, October 16, 2025

সর্বাধিক পঠিত

আরও পড়ুন

রিপন মিয়া: কনটেন্ট ক্রিয়েটরের পরিবারিক ঝামেলা, সোশ্যাল মিডিয়ায় উত্তাপ

কনটেন্ট ক্রিয়েটর রিপন মিয়া ফের সংবাদের শিরোনামে। মঙ্গলবার সারাদিন তাঁর নামে চলেছে ব্যাপক আলোচনা। একদিকে টেলিভিশন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে পরিবারিক অভিযোগ, অন্যদিকে মায়ের কাছে কাঁদতে দেখা গেছে রিপনকে। এই দুই বিপরীতমুখী ঘটনা পুরো সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে তৈরি করেছে তুমুল তোলপাড়। রিপন মিয়ার জীবন, তাঁর সাফল্য এবং পরিবারিক সম্পর্ক নিয়ে এখন চলছে নানা প্রশ্ন।

দুপুরবেলা কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়া পেজ এবং চ্যানেলে ছড়িয়ে পড়ে একটি বিস্ফোরক প্রতিবেদন। সেখানে রিপনের মা জানান, তাঁরা গরিব পরিবার থেকে উঠে এসেছেন, কিন্তু ছেলের সাফল্যের পর তাঁকে আর পরিচয় দিতে চান না রিপন। মায়ের কথায়, “অনেক কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করেছি, কিন্তু এখন আমাদের সঙ্গে দেখা যায় না। যদি পরিচয় দিলে তাঁর সম্মান কমে যায়!”

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে যাওয়া রিপন এখন মা-বাবার থেকে আলাদা বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন। কিন্তু পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন না বলে অভিযোগ। এই খবর প্রকাশের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া। অনেকে লিখেছেন, “সাফল্য মানুষকে পরিবর্তন করে ফেলে।” অন্যরা বলছেন, “মায়ের চোখের জল দেখে রিপনের কোনো ভিডিও আর দেখতে ইচ্ছে করে না।”

সমালোচনার ঝড়ের মধ্যেই মঙ্গলবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় একটি নতুন ভিডিও। সেখানে রিপন মিয়াকে দেখা যায় মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে। আঞ্চলিক ভাষায় তিনি বলছেন, “তোমাকে দেখি না আমি? আব্বাকে দেখি না? তুমি এটা কী করলে? আমার জীবন শেষ করে দিলে!”

মায়েরও চোখে জল। ছেলেকে আঁকড়ে ধরে কাঁদছেন তিনি। এই ভিডিও প্রকাশের পর পরিস্থিতি বদলে যায়। যারা আগে সমালোচনা করেছিলেন, তাদের অনেকেই এখন বলছেন, “মা-ছেলের বন্ধন সবচেয়ে শক্তিশালী। কোনো অস্থায়ী ভুল বোঝাবুঝি মিটে যাক।” এই ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় কত দ্রুত মতামত পাল্টাতে পারে।

যোগাযোগ করলে রিপন মিয়া জানান, তিনি এখন মানসিকভাবে এই বিষয়ে কথা বলার অবস্থায় নেই। তবে শিগগিরই সব প্রশ্নের জবাব দেবেন। তাঁর কথায়, “আমি সবসময় পরিবারকে দেখভাল করে এসেছি এবং ভবিষ্যতেও করব। যদি কোনো ত্রুটি থাকে, তা ঠিক করব। কিন্তু যারা আমার সরল মা-বাবাকে ব্যবহার করে ব্যবসা করছে, তাদের একদিন বিচার হবে।”

এর আগে সোমবার ফেসবুকে এক পোস্টে রিপন দাবি করেন, কয়েকজন সাংবাদিক অনুমতি ছাড়াই তাঁর বাড়িতে ঢুকে পড়েন। ঘরে নারী সদস্য থাকা সত্ত্বেও ভিডিও করেন এবং পরিবারকে হেনস্থা করেন। এই অভিযোগ তুলে তিনি মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

নেত্রকোনা সদরের সাধারণ কাঠমিস্ত্রি রিপন মিয়া ২০১৬ সালে হঠাৎই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তাঁর একটি ভিডিও—”বন্ধু তুমি একা হলে আমায় দিয়ো ডাক, তোমার সাথে গল্প করব আমি সারা রাত”—লাখো মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। সহজ-সরল আবেগ এবং আঞ্চলিক ঢঙে তৈরি ভিডিওগুলো তাঁকে করে তোলে সোশ্যাল মিডিয়া সেনসেশন।

এখন তাঁর ফেসবুক ফলোয়ার প্রায় ১৯ লাখ। বিজ্ঞাপন, সিনেমা প্রচার এবং কিছু নাটকে অভিনয় করে তিনি আরও এগিয়ে গেছেন। কিন্তু এই সাফল্যের পিছনে লুকিয়ে থাকা পরিবারিক চাপ এখন সামনে এসেছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জীবন প্রায়শই এমন ঘটনায় ভরা। রিপন মিয়ার ক্ষেত্রে এই ঘটনা শেখায়, খ্যাতি এবং পরিবারের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা কতটা জরুরি। আগামী দিনে কী হয়, সেটা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে ভক্তকুল।

সাম্প্রতিক