ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ১৫ অক্টোবর ২০২৫: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি জমি মাপজোখে বাধা সৃষ্টি এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতে একদিনের কারাদণ্ড পাওয়ার পর যুবদলের নেতা সোহেল জাহানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া, তাঁর সঙ্গে যুবদলের সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের যেকোনো সাংগঠনিক যোগাযোগ বন্ধ রাখার কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা স্থানীয় রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার স্বাক্ষরিত একটি অফিসিয়াল সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জারি এই বিজ্ঞপ্তি যুবদলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়। জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মাহমুদও রাত প্রায় ১০টি ৩০ মিনিটের দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোহেল জাহানকে দল থেকে সম্পূর্ণ বহিষ্কৃত করা হয়েছে।
৪৫ বছর বয়সী সোহেল জাহান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। জেলা শহরের গোকর্ণ ঘাটের মূল বাসিন্দা হলেও তিনি পরিবারসহ কাজীপাড়ায় বর্তমানে বসবাস করেন। গত সোমবার প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি জমি মাপজোখে বাধা ও মারধর, যুবদল নেতার কারাদণ্ড’ শিরোনামে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যা এই ঘটনাকে আলোকপাত করে।
খবর পাওয়া গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের কাজী মাহমুদ শাহ সড়কের সংলগ্ন কাজীপাড়ার উত্তরাংশে অবস্থিত ১ নম্বর খাত-খতিয়ানভুক্ত ১৫ শতাংশ সরকারি জমিতে বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) প্রকল্পের অধীনে একটি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই জমির মাপজোখ ও সীমানা নির্ধারণের জন্য সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অফিসের সূত্র জানায়, সোমবার দুপুর ১:৩০টার দিকে সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার রফিকুল ইসলাম, জারিকারক বোরহান উদ্দিন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
স্থানীয় সূত্র অনুসারে, যুবদল নেতা সোহেল জাহান ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে মাপজোখ কার্যক্রমে বাধা দেন। তিনি সার্ভেয়ার রফিকুল ইসলাম ও জারিকারক বোরহান উদ্দিনকে জানান, এই জায়গাটি তার নিজস্ব সম্পত্তি। কর্মকর্তাদের বাধা অগ্রাহ্য করে কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় সোহেলের সঙ্গে তাদের মধ্যে তুমুল কথাবার্তা হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় জারিকারক বোরহান উদ্দিনের সঙ্গে সোহেলের হাতাহাতি হয়, ফলে বোরহান গুরুতর আহত হন।
এই ঘটনার পর সেই দিন সন্ধ্যায় ইউএনও সিফাত মো. ইশতিয়াক ভূঁইয়া কাজীপাড়ার একটি বাসা থেকে সোহেল জাহানকে গ্রেপ্তার করেন। পরবর্তীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিচার করে তাঁকে একদিনের কারাদণ্ড এবং ১ হাজার টাকা জরিমানা আদেশ করা হয়। এই সিদ্ধান্ত যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে যাওয়ার পর তাৎক্ষণিক বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
যুবদলের এই কদম স্থানীয় স্তরে বিরোধীদের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া জাগিয়েছে। অনেকে এটাকে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার উদাহরণ হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ এতে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি প্রকল্পে বাধা সৃষ্টির মতো ঘটনা উন্নয়ন কার্যক্রমকে ব্যাহত করে, যা জনগণের স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যুবদলের নেতৃত্ব এখন সকল সদস্যকে সতর্ক করেছে যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটে।