Friday, October 17, 2025

সর্বাধিক পঠিত

আরও পড়ুন

তামিল সিনেমায় নতুন তারকার উত্থান

তামিল সিনেমা জগতে প্রদীপ রঙ্গনাথনের নাম এখন সকলের মুখে মুখে। মাত্র দুটি ছবির মাধ্যমে তিনি লক্ষ লক্ষ অনুরাগী অর্জন করেছেন, যা অনেক প্রতিষ্ঠিত তারকার জন্যও স্বপ্নের মতো। সম্প্রতি একটি ভাইরাল ভিডিওতে এক সাংবাদিক তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, “আপনার চেহারা ঐতিহ্যবাহী নায়কদের মতো নয়, তবু কীভাবে এত অল্প সময়ে এত বিশাল ফ্যানবেস তৈরি করলেন? এটা কি কঠোর পরিশ্রমের ফল, না ভাগ্যের খেলা?” এই প্রশ্নটি আসলে প্রদীপের জনপ্রিয়তার মূল সারাংশ ধরে ফেলেছে। আজকের যুগে যখন বড় বড় তারকাদের ছবিও দর্শকদের মনে না দাগ কাটতে পারছে, তখন প্রদীপের এই সাফল্য শুধু ভাগ্য বা পরিশ্রম নয়—এর পিছনে রয়েছে স্মার্ট কৌশল এবং যুগোপযোগী গল্পকথন।

তামিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রদীপ রঙ্গনাথনের উত্থান দেখে অনেকেই অবাক। তাঁর সাফল্যের গোপনীয়তা লুকিয়ে আছে তরুণ দর্শকদের মন বোঝার ক্ষমতায়। চলচ্চিত্রের ইতিহাস বলে, যারা প্রথমে যুবক-যুবতীদের হৃদয় জয় করেন, তারা পরে পরিবারের সকল সদস্যের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেন। উদাহরণস্বরূপ, সুরিয়া তাঁর ‘ভারানাম আয়িরাম’ এবং ‘সিল্লুনু ওরু কাধাল’ ছবির মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। একইভাবে, বিজয় ‘খুশি’ এবং ‘সাচিয়েন’, পবন কল্যান ‘বাদরি’ এবং ‘মুরারি’, মহেশ বাবু এবং প্রভাসও তাঁদের প্রথম ছবিগুলোতে যুব প্রজন্মকে লক্ষ্য করে সাফল্য পেয়েছেন। এমনকি বিজয় দেবরকোন্ডা ‘পেলি ছুপুলু’ এবং ‘অর্জুন রেড্ডি’র মাধ্যমে আধুনিক যুবকদের প্রতিনিধিত্ব করে উঠে এসেছিলেন।

প্রদীপও এই পথ অনুসরণ করে ‘লাভ টুডে’ ছবিতে সাফল্য পেয়েছেন। এই ছবিতে হাস্যরস এবং ডিজিটাল যুগের চ্যালেঞ্জগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আধুনিক সম্পর্কের গল্প—যেখানে বিশ্বাস, স্বচ্ছতা এবং ভয়ের মতো উদ্বেগগুলো উঠে এসেছে। ছবিতে এক যুগলের ফোন অদলবদলের ঘটনা দেখিয়ে প্রদীপ গোপনীয়তা, সততা এবং কৌতূহলের মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলোকে ছুঁয়েছেন। ফলে, জেন-জি দর্শকরা এতে নিজেদের প্রতিফলন খুঁজে পেয়েছেন। প্রথমে কলেজ ছাত্র-ছাত্রী এবং তরুণ পেশাজীবীরা এটিকে গ্রহণ করেছেন, পরে পরিবারের অন্যরাও এতে সচেতনতার বার্তা খুঁজে পেয়ে প্রশংসা করেছেন। এই স্মার্ট কৌশল প্রদীপকে অনন্য করে তুলেছে।

প্রদীপ রঙ্গনাথন শুধু অভিনয় করেন না, তিনি গল্পের মাধ্যমে মুহূর্ত তৈরি করেন। ‘লাভ টুডে’ ছবিতে রোমান্সের সঙ্গে যুবকদের উচ্ছ্বাস এবং সচেতনতা মিশিয়ে তিনি এক অনন্য মিশ্রণ তৈরি করেছেন। ছবির গানগুলো শুধু সঙ্গীত নয়, বরং জীবনশৈলী এবং অনুভূতির প্রতিচ্ছবি। অন্যদিকে, ‘ড্রাগন’ ছবিতে যদিও তিনি পরিচালনা করেননি, তবু চরিত্র রাঘবনের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের দ্বন্দ্ব, আকাঙ্ক্ষা এবং ভুল সিদ্ধান্তগুলোকে বাস্তবসম্মতভাবে তুলে ধরেছেন। এই ছবিতে একজন ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের জীবন দেখিয়ে প্রদীপ যুবকদের বাস্তবতা উন্মোচন করেছেন।

প্রদীপের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো তাঁর বাস্তবধর্মী স্টাইল। তিনি ছবিতে সচেতনতার বার্তা দেন, কিন্তু কখনো উপদেশমূলক হয়ে ওঠেন না। নায়ক হিসেবে নিজেকে আদর্শ দেখাতে চান না, বরং সাধারণ মানুষের মতো বাস্তবিক চরিত্র হয়ে উঠেন। এই ধরনের নির্মাণ তাঁকে অন্যান্য তারকাদের থেকে আলাদা করে। তাঁর ছবিগুলোতে বাবা-মেয়ের আবেগ, প্রেম এবং সামাজিক বার্তার সমন্বয় দেখা যায়, যা সকল বয়সের দর্শকদের আকর্ষণ করে।

আজকের সিনেমা শুধু গল্প নয়, প্রচারণা এবং প্যাকেজিংও গুরুত্বপূর্ণ। প্রদীপের চেহারা টিপিক্যাল নায়কের মতো নয়—তিনি যেন পাশের বাড়ির সাধারণ যুবক। এই সাধারণত্বকেই তিনি ব্র্যান্ড করে তুলেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর উপস্থিতি এবং মজাদার প্রচারণা ভিডিওগুলো দর্শকদের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তোলে। যখন অনেক তারকা প্যান-ইন্ডিয়া স্বপ্ন দেখেন, প্রদীপ তামিল দর্শকদের উপর ফোকাস করেন। কম বাজেটের ছবি তৈরি করে তিনি জানেন, দক্ষিণ ভারতের দর্শকদের পছন্দ হলে লাভের পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

প্রদীপের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো পর্দা এবং বাস্তবের মধ্যে সেতু তৈরি করা। তাঁর চরিত্রগুলোতে দর্শকরা নিজেদের দেখতে পান—প্রেম, লড়াই এবং জীবনের উত্থান-পতন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “মানুষ আমার মধ্যে নিজেকে খুঁজে পান। তারা দেখেন, তারা প্রেম করছেন, তারা লড়ছেন—এতে আমি স্বয়ং নায়ক হয়ে উঠি।” এমনকি অভিনেতা নাগার্জুনও বলেছেন, “কয়েক দশক আগে রজনীকান্ত সিনেমা বদলে দিয়েছিলেন, পরে ধনুশ। এখন প্রদীপে সেই আগুন দেখছি। তাকে দেখে মনে হয়, সে আমাদেরই একজন।”

তামিল সিনেমা জগত কঠিন, এবং প্রদীপের জনপ্রিয়তা যতই বাড়ুক না কেন, একটি ভুল সিদ্ধান্ত সবকিছু বদলে দিতে পারে। তবে প্রদীপ এটা ভালোভাবে জানেন। তিনি বলেন, “আমার মূল শক্তি হলো সততার সঙ্গে গল্প বলা। ভবিষ্যতে এটাই ধরে রাখতে চাই।” তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি তাঁকে আরও সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে বিশ্বাস করা যায়।

(তথ্যসূত্র: বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্ট এবং ইন্ডিয়া টুডে-এর ভিত্তিতে সংকলিত)

সাম্প্রতিক