Thursday, October 16, 2025

সর্বাধিক পঠিত

আরও পড়ুন

৪৪ বছর পর ইসলামী ছাত্রশিবিরের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে দীর্ঘ ৪৪ বছরের বিরতির পর আবারও নেতৃত্বের শীর্ষে উঠে এসেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। এই সংগঠনের সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের প্রার্থীরা সহসভাপতি (ভিপি) এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সহ মোট ২৪টি গুরুত্বপূর্ণ পদে বিজয়ী হয়েছেন। এই ঘটনা ক্যাম্পাস রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে।

২০২৫ সালের ১৬ অক্টোবর ভোর সাড়ে চারটায় সপ্তম চাকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন জানিয়েছেন, এই নির্বাচন সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রার্থী এবং ভোটারদের অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত উদ্দীপনাময়, যা ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতিফলন ঘটিয়েছে।

সহসভাপতি পদে ইসলামী ছাত্রশিবিরের মো. ইব্রাহিম হোসেন ৭ হাজার ৯৮৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি এবং ইতিহাস বিভাগের এমফিল শিক্ষার্থী। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের সাজ্জাদ হোসেন পেয়েছেন ৪ হাজার ৩৭৪ ভোট।

সাধারণ সম্পাদক পদে একই প্যানেলের সাঈদ বিন হাবিব ৮ হাজার ৩১ ভোট নিয়ে জয়লাভ করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাহিত্য সম্পাদক এবং ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তর ছাত্র। তাঁর নিকটতম প্রতিযোগী ছাত্রদলের মো. শাফায়াত পেয়েছেন ২ হাজার ৭৩৪ ভোট।

চাকসু নির্বাচনে মোট ২৬টি পদের জন্য ভোটগ্রহণ হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র একটি পদে ছাত্রদলের প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) হিসেবে ৭ হাজার ১৪ ভোট পেয়ে জিতেছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাজ্জাদ হোসেন পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৫ ভোট। এছাড়া সহ খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে তামান্না মাহবুব বিজয়ী হয়েছেন, যিনি বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের প্রতিনিধি।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের এই বিজয় ১৯৮১ সালের পর প্রথম। সেই নির্বাচনে ভিপি পদে জসিম উদ্দিন সরকার এবং জিএস পদে আবদুল গাফফার বিজয়ী হয়েছিলেন, যাঁরা উভয়েই সংগঠনের তৎকালীন নেতা ছিলেন। ১৯৯০ সালে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’র কাছে পরাজিত হওয়ার পর দীর্ঘ তিন দশক চাকসু নির্বাচন বন্ধ ছিল।

আশির দশকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াতে ইসলামীর এই ছাত্রসংগঠনের প্রভাব ছিল যথেষ্ট শক্তিশালী। কিন্তু ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণ হারায় তারা। গত বছরের ৫ আগস্ট প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফিরে আসার পর মাত্র এক বছরের মধ্যে এই সাফল্য অর্জন করেছে শিবির, যা ক্যাম্পাসে নতুন উত্থানের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

চাকসু নির্বাচনের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত: এখন পর্যন্ত মাত্র সাতবার অনুষ্ঠিত হয়েছে—১৯৭০, ১৯৭২, ১৯৭৪, ১৯৭৯, ১৯৮১, ১৯৯০ এবং ২০২৫ সালে। এই নির্বাচন ক্যাম্পাস রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা এই নির্বাচনকে তাদের গণতান্ত্রিক যাত্রার শুরু হিসেবে দেখছেন। অনেকেই বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ না পেলেও চাকসুতে অংশগ্রহণ করে তারা গণতন্ত্রের স্বাদ পেয়েছেন। এই বিজয় শুধুমাত্র একটি সংগঠনের সাফল্য নয়, বরং ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির পুনরুজ্জীবনের প্রতীক।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর এই ফলাফল ভবিষ্যতে ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক গতিপথকে প্রভাবিত করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আরও আপডেটের জন্য আমাদের সাথে থাকুন।

সাম্প্রতিক